সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছেন নলছিটির গরীবের ইউএনও নজরুল ইসলাম

বালী তাইফুর রহমান তূর্য,নলছিটি।। গরীব,অসহায়,পাগল,প্রতিবন্ধী,ভিক্ষুক একটু সমস্যা হলেই সবার একটাই ঠিকানা নলছিটির টিএনও সার(ইউএনও)। দরজার সামনে নিরাপত্তা কর্মীরা অস্থির হয়ে পরা লোকদেরকে দাড় করিয়ে ফ্যানের নিচে বেঞ্চে বসান।কিন্তু সবাই অস্থির,বসার সময় নেই জলদি ইউএনওর সাথে কথা বলতেই হবে।ইউএনও ক্যামেরায় দেখেই কলিং বেল বাজিয়ে দড়জা খুলে দিতে বলেন,তারা হুরমুড়িয়ে রুমে ঢুকে যান।ইউএনও তাদেরকে বসতে বলেন।কিন্তু বসার মতো সময়ও যেনো তাদের নেই।এই অস্থির লোকদেরকে একটা প্রান খোলা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন “কি সমস্যা?”। এরপরেই নানান সমস্যার কথা শুরু হয়।কারও ঘরে বাজার নেই,কারও ঔষধের টাকা নেই,কারও ছেলে কথা শোনে না,কারও ঘর নেই,কারও জমিজমার বিরোধ,কারও জন্ম নিবন্ধন, কেউ বা বলে ” ছার আমনেরে ইট্টু দ্যাকতে আইছি” এদের কারও জীর্নশির্ন দেহ,ময়লা পোশাক,পায়ে জুতা নেই,লুংগী পরা হাতে একটা ময়লা ব্যাগ,কেউ একেবারেই বৃদ্ধ, এদের কেউ কেউ নিয়মিত আসেন কোনো কাজ ছাড়াই।এদের সবার অন্তরকে শান্ত করার একটিই যায়গা নলছিটির ইউএনও নজরুল ইসলাম।প্রতিদিনের এই একই চিত্র নলছিটি উপজেলা পরিষদ চত্তরের।আর এরকম অসংখ্য লোকের নানান সমস্যা,অভিযোগ শুনে হাসিমুখেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুক্র শনি, খুব সকালে কিংবা গভীর রাত তার অফিসের বাইরের বাস ভবনের সামনেও প্রতিদিন এরকম অসংখ্য গরীব লোকের যাতায়াত।তাদের এক প্রকার সবার জানা ইউএনওর কোনো ছুটি লাগে না,গেলেই পাওয়া যায়।

আর এমন সেবা দিয়েই জনবান্ধব প্রশাসক ও ইউএনও হিসেবে ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং মানবিক পদক্ষেপে তিনি স্থানীয়দের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর নলছিটিতে যোগদানের পর থেকেই নজরুল ইসলাম পরিত্যক্ত শিশুপার্ক, ময়লার ভাগাড়, অবহেলিত চায়না মাঠসহ বহু সরকারি জায়গাকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। আগে যেখানে প্রকল্প কাগজে থাকতো, এখন সেগুলো বাস্তবায়নের মুখ দেখছে। ঝড় বন্যার মধ্যেও রাতেই বের হয়ে যান সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে উপড়ে পরা গাছ কেটে রাস্তা পরিস্কার করতে,ছুটে যান ত্রান সামগ্রী নিয়ে।শীতের কম্বল বিতরনে নিজেই বের হয়েছেন রাতে রাতে,গরীব খুজে খুজে দরিদ্র জেলেপাড়ার লোকজন,মাঝি,দরিদ্র শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা,ভ্যান চালক,ভিক্ষুক,বেদেপল্লীর বেদে,এতিমখানার শিশু,প্রতিবন্ধী,এমনকি তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াদের কাছে ছুটেছেন শীতের মধ্যে।সাথে একঝাঁক তরুন সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে তার এসব মানবিক কার্যক্রম তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

হাসপাতাল সহ শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়,ময়লার ভাগাড় নিজেই পরস্কার করেছেন বিডি ক্লিন সহ অন্যন্য সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে।পৌরসভা এলাকার রাস্তাগুলো এক সময় ছিলো ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভয়ংকর,সেখানে এখন রাত হলেই জ্বলে উঠছে সড়কবাতি।কোথাও একটি খুটিতে বাতি জ্বলছে না,নাগরিকরা খবর পৌছানোর এক ঘন্টার মধ্যেই হয়ে যায় সমাধান।ফরাসিনা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ধ্বসে গিয়েছিলো বন্যায়।লোকজনের চলাচল বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংবাদ পেয়েই সকাল বেলা ছুটে গিয়েছেন সেখানে,অত ভোরে ইউএনওকে দেখে সেই এলাকার।মানুষও চমকে গিয়েছিলেন।গেলেন, দেখলেন,সমাধান করলেন।সাধারণ মানুষের যেমন চাওয়া,তিনিও যেমন সেরকমই পাওয়া মানুষ।দিনের বেলা দাপ্তরিক কাজ সেরে রাতে বের হন রাস্তাঘাটের বেহাল দশা দেখতে,শহরের কি কি উন্নত করা দরকার সেসব দেখে দেখে পরিকল্পনা সাজাতে নির্দেশ দেন পৌর নির্বাহীকে।

নির্মাণাধীন ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি তিনি কাজ শুরু করেছেন গার্বেজ ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট, রিজার্ভ টাঙ্কি, ইকো পার্ক ও বাস টার্মিনাল নির্মাণের। পৌরসভার প্রায় বিশটি নতুন রাস্তা নির্মাণ হয়েছে তার তত্ত্বাবধানে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই নয়, মানবিকতা এবং সেবার মনোভাবেও নজরুল ইসলাম অনন্য। সরকারি সহায়তা নিজ হাতে পৌঁছে দিয়েছেন চরাঞ্চল, মাদ্রাসা ও দরিদ্র পরিবারগুলোতে।পরিত্যক্ত পরে থাকা শিশুপার্কে যুক্ত করেছেন নতুন দোলনা, স্লিপার ও রাইড, যা শিশুরা প্রতিদিন উপভোগ করছে। শিক্ষার মানোন্নয়নেও তার অবদান ব্যাপক। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অনিয়ম প্রমাণিত হলে তিনি দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যা স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছে। নলছিটির সর্বস্তরের মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউএনও নজরুল ইসলামের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করছেন। কেউ তাকে “জনতার ইউএনও” বলছেন, কেউবা “পরিবর্তনের রূপকার” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

যিনি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নাগরিকদের সেবা তাদের দুয়ারে নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন নিয়মিত।সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্তও করেন দাপ্তরিক কাজ।ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মতো তার কাছে গেলেই যেনো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাদের মতে, নজরুল ইসলামের নেতৃত্বেই নলছিটি পেয়েছে একটি সক্রিয় ও সেবামূলক প্রশাসন। তার নেতৃত্বে উপজেলার চেহারা বদলে যাচ্ছে দিনকে দিন। প্যারালাইজড নি:স্বন্তান আমির আলী বিছানায় পরে ছিলেন বহুদিন।নিজের সন্তান না থাকায় তাকে দেখারও কেউ নেই।যখন আর কুল কিনারা নেই,তখন সংবাদ পৌছালো ইউএনওর কাছে,সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে আমীর আলীর নিয়মিত ঔষধ পৌঁছে যেতো ইউএনওর ব্যক্তিগত টাকা অর্থাৎ বেতনের টাকায়।আমীর আলীর ভাতের জোগাড় নেই,একটু সুস্থ হয়ে নামলেন ভিক্ষা করতে।কিন্তু পায়ে পচন ধরায় হেটে হেটে ভিক্ষাও করতে পারছিলেন না তিনি।আবার দৌড়ে গেলেন সেই ইউএনওর কাছে।আমির আলীকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান উপহার দিলেন ইউএনও নজরুল ইসলাম।নি:সন্তান আমীর আলীকে আর ভিক্ষাও করতে হচ্ছে না,আক্ষেপ নিয়ে কাদতেও হচ্ছে না আল্লাহ একটা সন্তান তাকে দেননি।

এমনই আরেকজন দপদপিয়া ইউনিয়নের পুত্রবধূ রেখা বেগম,স্বামীর ধারালো ছুরির আঘাতে পঙ্গু হয়ে অচল হয়ে গেছেন।যেদিন রেখাকে তার স্বামী কুপিয়ে আহত করলো সেদিন তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কেউ ছিলো না।কারন বাবাও বেচে নেই,নিজের কোনো ভাইও নেই।রেখার মা কাদতে কাদতে ছুটে বেরাচ্ছিলেন রাস্তায় রাস্তায়।খবর পৌছলো ইউএনওর কাছে অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে এক তরুনী বাড়িতেই পচে মরছে।মাসের শেষ, তার নিজের মানিব্যাগ খুলে দেখলেন টাকা নেই।একজন সেচ্ছাসেবীকে বললেন ডাক্তারের কাছে নেয়ার ব্যবস্থা করেন আমি দেখছি,বাংলোতে গিয়ে সম্ভবত তার স্ত্রীর কাছ থেকে কিছু টাকা এনে তা দিয়েই চিকিৎসা করাতে পাঠালেন বরিশাল,সেখান থেকে ঢাকা।রেখা মেয়েটি তিন সন্তানের জননী,হাত পুরো সচল না হলেও সে এখন হাটতে পারে।

পৌরসভার কান্ডপাশা এলাকার ইজিবাইক চালক সুমন ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের দুইজন সহ নিহত হলেন,আহত হলেন আরও চারজন।একেবারেই দরিদ্র পরিবার,ভাত জোগাড়ের জো নেই,চিকিৎসা চালানো তো আরও কঠিন।খবর পৌছলো ইউএনওর কাছে।সাথে সাথেই লোক পাঠালেন শের ই বাংলা হাসপাতালে।আইসিউ থেকে ওয়ার্ড,নিয়মিত পৌছে যেতো তার সহায়তা।কিন্তু একেবারেই প্রচারবিমুখ হওয়ায় এসব ঘটনা কখনও প্রকাশ্যে আনতে দিতেন না তিনি।এরকম অসংখ্য গরীব আছে নলছিটিতে যাদের ঘরের চাল,বাজার, ঔষধ কিনে দিয়েছেন নিজের বেতনের টাকায়।

নলছিটির সুজন সভাপতি সাংবাদিক খলিলুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজন আন্তরিক, দায়বদ্ধ ও কর্মঠ প্রশাসক, যিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা সরাসরি শুনে সমাধানে অগ্রাধিকার দিতেন। প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির পরিবেশে তিনি এককভাবে স্বচ্ছতা ও সেবার জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। আমরা বিশ্বাস করি—কেউই প্রশ্ন বা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নন। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার যদি একজন সৎ কর্মকর্তার কর্মতৎপরতা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষই। এ বিষয়ে নলছিটির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো:নজরুল ইসলাম বলেন জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা মতো দেশ ও নলছিটির কল্যানে কাজ করে যাচ্ছি।এটা আমার পেশাদারি দায়িত্ব হিসেবে পালন করছি।নলছিটির সকলকে নিয়ে একটি সুন্দর ও আধুনিক নলছিটি গড়তে পৌর প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছি।কোনো অভিযোগ থাকলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত,তাদের নির্দেশ পালন করাই আমার কাজ।

  • Related Posts

    নলছিটির ভাঙন কবলিত এলাকায় ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন

    বালী তাইফুর রহমান তূর্য, নলছিটি প্রতিনিধি।। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ও মোল্লারহাট ইউনিয়নের সীমানা ঘেষা হদুয়া লঞ্চ ঘাট, ইসলামাবাদ সহ ভাঙন কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা…

    নলছিটিতে জোর পূর্বক গাছের তাল কেটে নেওয়ার অভিযোগ

    নিজস্ব প্রতিনিধি।। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় দূর্বিত্ত কর্তৃক গাছের তাল কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৮ মে ২০২৫ ইং তারিখ আনুমানিক বেলা ২ টার সময় নলছিটি উপজেলার মগর ইউনিয়নের মগর…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *