দেশের মুমূর্ষু সাস্থ্যসেবা খাতকে বাচিয়ে তুলতে ডা: জিয়া হায়দারের চিকিৎসা ব্যতীত মৃত্যু নয় প্রস্তাব

বালী তাইফুর রহমান তূর্য, নলছিটি।। প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়ে ওঠে “চিকিৎসা ব্যতীত মৃত্যু নয়” অথবা চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যু। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়েও আমাদের মুক্তি মেলেনি সাস্থ্য সেবায়।সরকারি সাস্থ্য খাত নিজেই যেনো মুমূর্ষু।দেশের ভেঙে পরা কাঠামোর সাস্থ্য খাতকে বাচিয়ে তুলতে অন্যরকম এক লড়াই শুরু করেছেন ঝালকাঠির সন্তান আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা: জিয়াউদ্দিন হায়দার।

বিশ্ব ব্যাংকের সাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশে কাজ করেছেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও রাজনীতিক ডা: জিয়াউদ্দীন হায়দার। এছাড়াও পরমানু শক্তি কমিশন সহ খ্যাতনামা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও করেছেন অধ্যাপনা। সর্বশেষ কিছুদিন আগে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খলেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পেয়েছেন। রাস্ট্র সংস্কারে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত ৩১ দফায় তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবিত দফাও রয়েছে। এর মধ্যে তিনি দেশের ভেঙে পরা সাস্থ্য খাতকে বাচিয়ে তুলতে তার পরিকল্পনার অংশবিশেষ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করার একটি বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন তার সোশ্যাল মিডিয়া(ফেসবুক) একাউন্টে।যার শিরোনাম দিয়েছেন “চিকিৎসা ব্যতীত মৃত্যু নয়” যেটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

বিশ্ব ব্যাংকের হয়ে ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পূর্ব এশিয়ার কম্বোডিয়ায় কর্মরত ছিলাম। কম্বোডিয়া ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ লাও পিডিআর-ও আমার কাজের আওতাভুক্ত ছিল। এই দুটি দেশের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন ছিল আমার কাজের মূল ফোকাস। কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আমার পর্যবেক্ষণ ও সামান্য অবদান খুব সংক্ষেপে আজ তুলে ধরতে চাই।

খেমার রুজ শাসনামলের পরবর্তী সময়ে কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। ১৯৭৫–১৯৭৯ সালের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হন বা দেশত্যাগে বাধ্য হন। ১৯৮০ সালে শনাক্তকৃত ডাক্তারদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ জন। পরবর্তীতে সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও তারা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়।

কিন্তু ২০১৬–১৭ সাল পর্যন্ত দুটি প্রধান বাধা কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য খাতকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। এর একটি ছিল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নিম্ন মান, আরেকটি ছিল দারিদ্র্যের কারণে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অসমর্থতা। আমরা এই দুটি প্রধান বাধা দূর করার লক্ষ্যে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে দেশব্যাপী বাস্তবায়নের জন্য একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য প্রকল্প প্রণয়ন করি।

এই প্রকল্পের মূল ছিল স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের মাধ্যমে, প্রথমত দেশের প্রতিটি হাসপাতালকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং এই জবাবদিহিতার সঙ্গে একটি নিরপেক্ষ, তথ্যভিত্তিক ইনসেনটিভ কাঠামো যুক্ত করা। দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র দরিদ্র পরিবারের জন্য একটি সামাজিক ইনসুরেন্স স্কিম চালু করা, যার মাধ্যমে তাদেরকে বিনামূল্যে দেশের যেকোনো সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া যায়। সামাজিক স্বাস্থ্য ইনসুরেন্সের অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের হাতে। বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা যেমন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি প্রকল্পটিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সম্মত হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই প্রকল্পের সামাজিক ইনসুরেন্স কম্পোনেন্টটি প্রথম দিন থেকেই জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্যান্য খরচেরও অর্ধেক বহন করে কম্বোডিয়া সরকার।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সংস্কার কর্মসূচি যুদ্ধবিধ্বস্ত কম্বোডিয়ার পিছিয়ে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নে সহায়ক হয়। বিশেষ করে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে উন্নত সেবা প্রদানের উৎসাহ বহুগুণ বেড়ে যায়, হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটির অংশগ্রহণ বাড়ে, স্বাস্থ্যসেবার মানে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, রোগীদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সর্বোপরি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়।

কম্বোডিয়ার মতো আরও অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য খাতে জরুরি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দৃশ্যমান সুফল পাওয়া গেছে। তবে এই সুফল পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো—দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দক্ষ নেতৃত্ব, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা। স্বৈরাচারের পতনের পর বাংলাদেশেও এই উপাদানগুলোর কয়েকটির উপস্থিতি মোটামুটি দৃশ্যমান। আশা করব, আগামীর নির্বাচনে যেই সরকার গঠন করুক না কেন, তারা বাংলাদেশের গনমানুষের বহু বছরের জমিয়ে রাখা আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করবে এবং বাংলাদেশের ঘুণে ধরা স্বাস্থ্য খাতকে সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজাবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে—সবার জন্য স্বাস্থ্য এবং “চিকিৎসা ব্যতীত মৃত্যু নয়”—৩১ দফার এই স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দেওয়া |

ইতোমধ্যে ডা: জিয়াউদ্দিন হায়দার এবং তার সহোদর ডা: শাকিল আরও প্রখ্যাত কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে নিজ জেলা ঝালকাঠিতে প্রতি মাসেই আয়োজন করছেন শিশু বিশেষজ্ঞ সহ অন্যন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প।যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যপক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই মনে করছেন দেশের সাস্থ্য খাতকে বাচিয়ে তুলতে ডা: জিয়া হায়দারের মতো লোক কোনো দায়িত্ব পেলে সত্যিই হয়তো এই যুদ্ধটাতে জিততে পারবেন।সরকারি সাস্থ্য সেবায় হয়রানির বদলে হয়তো সেবা মিলতেও পারে, যা গরীবের জন্য হবে তৃষ্ণার্ত পথিকের মুখে শীতল পানি ঢালার মতো প্রশান্তিময়।

  • Related Posts

    নলছিটির ভাঙন কবলিত এলাকায় ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন

    বালী তাইফুর রহমান তূর্য, নলছিটি প্রতিনিধি।। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ও মোল্লারহাট ইউনিয়নের সীমানা ঘেষা হদুয়া লঞ্চ ঘাট, ইসলামাবাদ সহ ভাঙন কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা…

    নলছিটিতে জোর পূর্বক গাছের তাল কেটে নেওয়ার অভিযোগ

    নিজস্ব প্রতিনিধি।। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় দূর্বিত্ত কর্তৃক গাছের তাল কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৮ মে ২০২৫ ইং তারিখ আনুমানিক বেলা ২ টার সময় নলছিটি উপজেলার মগর ইউনিয়নের মগর…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *