

“শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড”,মেরুদণ্ডহীন কারিগরের হাতে কিভাবে একটি শক্ত মেরুদণ্ডের জাতী তৈরি হবে!
বালী তাইফুর রহমান তূর্য,সমাজকর্মী ও লেখক:
যারা মেরুদণ্ড শক্ত করে দেবেন তারাই তো সূচনা থেকে দুর্নীতিতে হাবুডুবু খান।নীতি নৈতিকতা,সততা,নিষ্ঠার দিক্ষা দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বানানো হয়েছিলো।শিক্ষকদেরকে বলা হতো মানুষ গড়ার কারিগর।কারিগর যেমন হবেন,তার তৈরিও তেমন হবে।সমাজে যে একটা পুরো প্রজন্মের মধ্যে নীতি,নৈতিকতা,আদব কায়দা,সম্মানবোধ,সততা এবং জ্ঞ্যান থেকে দূরে এর কারণও কিন্তু এইসব কারিগর এবং তাদের পুরো সিস্টেম।
সততা ও নীতি শেখানোর জন্য নিয়োগ দেয়া শিক্ষকদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয় দুর্নীতি করে,ভুয়া বা জাল সনদেও চাকরি করেন অনেকে।প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও দুর্নীতি ছাড়া পিওন থেকে শিক্ষক প্রায় কেউই বিনা পয়সায় নিয়োগ পাননি এটা হলফ করে বলা যায়।যেই যত গলা ফাটাক,আসল সত্য হলো বিনা পয়সায় স্কুলের ঘন্টা বাজানো দপ্তরি বা পাহারা দেয়া নাইট গার্ড থেকে নীতি শেখানো অধিকাংশ শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক কেউই দুর্নীতির থেকে রেহাই পাননি বলে দুর্নীতির সাথে কম বেশি এরাও জড়িত কারন সিস্টেমটাই এরকম হয়ে গেছে।অর্থাৎ যিনি নৈতিকতা শেখাবেন তার নিজেরই নৈতিকতা এবং চরিত্র দুটিতেই দুর্বলতা থাকে।
ফলে চাকরি নেয়ার পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রুপিং,হিংসা,ঠেলাঠেলি,দ্বায় চাপিয়ে বেরানো,দায়িত্ব ফাকি দেয়া,নিজ দায়িত্ব সম্পর্কেই পুরো না জানার অজ্ঞতা,ভাগাভাগির অসম বন্টন সহ নানান কারনে গ্রুপিং হয় ভয়াবহ।একজন শিক্ষক অনুপস্থিত হলে আরেকজনকে সেখানে ঠেলেও পাঠানো যায় না,অথচ ছাত্ররা ততক্ষণে স্কুল কলেজ মাথায় তুলে নাচে।
একটা পুরো প্রজন্ম শিখছেই না শিক্ষাগুরুর মর্যাদাটা কত উপরে ছিলো।কারন নানান কুকর্মে এদের অনেকে নিজেদেরকে নিচে নামাতে নামাতে পাতালে ঠেকিয়েছে।প্রাইভেট বানিজ্য,পয়সার প্রতি লোলুপ দর্শন ও আসক্তি পুরো শিক্ষক সমাজকে নৈতিকতা থেকে টেনে এমন যায়গায় নামিয়েছে যে তারা নিজেদের ত্রুটিগুলো এখন চোখে আংুল।দিয়ে দেখিয়ে দিলেও মানতে নারাজ।যেমন দম্ভ,তেমন হিংসা এদের অনেককে মানুষের কাতার থেকেই বাইরে ফেলার পর্যায়ে নিয়ে গেছে কিন্তু নিজেরা অনুভব করতে পারে না।
এসব নিয়ে কেউ কিছু বললেই তারা ধর্মঘট ডাকে তাদের নাকি ইজ্জত চলে যায়,ইজ্জতটাও কত নরবরে হয়ে গেছে দিনেদিনে এদের যা ধর্মঘট করে আটকাতে হয়।
শুধু কি তাই,এইসব মানুষ গড়ার কারিগরদের যারা পরিচালনা করেন সেই সব ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিগুলো আরও বেশি নৈতিকতা বিবর্জিত এবং অসৎ। এরা নেতাদেরকে পয়সা দিয়ে স্কুল কলেজের সভাপতি হয়ে আসে,এরপরে পারলে প্রতিষ্ঠানের ইট কাঠ খুলেও বিক্রি করে তা উসুল করার ধান্দায় থাকে।কিসের শিক্ষার মানউন্নয়ন বা বিদ্যালয়,কলেজের উন্নয়ন করবেন নিজের পকেটের উন্নতি করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক প্রকার ধর্ষণ লুটপাট করে নি:স্ব করে দিয়ে যায়।টিউশন ফি থেকে পরীক্ষার ফি,জরিমানা,স্লিপের টাকা,উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ,সার্টিফিকেট এডমিট বিক্রির বিনা রশিদের টাকা,বিবিধ থেকে অমুক তমুক ফি কত নামের আদায় করা পয়সার নয়ছয় বিল ভাউচার আর অমুক তমুক খরচার নামে তারাও নয়ছয় করে এসেছেন যুগ যুগ ধরে।
আর কতগুলো বড় বড় চোর পলিটিক্যাল ইউনিফর্ম পরে ভদ্রলোকের ছুরাতে এসে খুব গলাবাজি করে যায়।না এদের নিজেদের মস্তকে কোনো জ্ঞ্যান থাকে,না থাকে সততা বা প্রজ্ঞা।অনেক সময় তো একেবারে স্টাব্লিশড মূর্খ,স্টুপিডরা এসব চেয়ার দখল করে করে পুরো দেশের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
এখন পুরো সিস্টেমটা একটা বান্দরের খেলার মতো লাগে,একদিকে এসব শিক্ষকরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের নানান আন্দোলনে ব্যস্ত,যখন দেশের শিক্ষা খাতকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছে তখন এসব শিক্ষক সমাজ মেরুদণ্ডহীন প্রানীর মতো চুপচাপ চাকরির ভয়ে গোলামি করে গেছেন।এই যে এতো ভোটচুরি ভোট ডাকাতির কথা বলা হয়,এগুলো কাদের হাত দিয়ে হয়েছে?সব এই মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রত্যক্ষ হাতে হয়েছে কারণ তারাই পোলিং অফিসার থাকেন।এসব ব্যালটের সবগুলোতে তাদের স্বাক্ষর থাকে।গনতন্ত্র ধ্বংসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী শিক্ষকরা,এবং তারাও সমান দ্বায়ী কেন তারা তখন ধর্মঘট ডাকলো না ভোটচুরি চলবে না,মানি না মানব না।পারেনি, সাহস হয়নি,কারন তাদের রক্তের সেই আগুন আর অবশিষ্ট নেই।নিভে গেছে অনিয়মের পয়সার লজেন্স চুষে চুষে।পুরো শিক্ষা পদ্ধতিটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে অথচ দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের কেউ দেশের এরকম বিপর্যয় বা দুর্দিনে একটা বাক্য উচ্চারনে সাহস দেখায়নি,নৈতিক অবক্ষয় যে এদের সবচেয়ে বেশি হয়েছে তাতে মোটেই সন্দেহ নেই।
অপরদিকে অধিকাংশ ছাত্ররা আজকাল বিভিন্ন ইস্যুতে যা বলে তাতে তাদের যে দর্শনের ছাপ পাওয়া যায় তাতে সততা,নীতি নৈতিকতা সব ধুয়ে মুছে গেছে।এরা ন্যায় অন্যায়ের তফাৎটুকুই করতে শেখেনি গত দেড় দুই যুগে।অর্থাৎ মেরুদণ্ডহীন শিক্ষকদের হাতে মেরুদণ্ডশূন্য যে প্রজন্ম আমাদের সামনে আসন্ন তা এক মহামারী হয়ে ধরা দিতে পারে,অবশ্য তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন অসত রাজনৈতিক চোরেরা কেননা এসব প্রজন্ম তাদের অধিকার বুঝবেও না,চাইবেও না,জ্ঞ্যানার্জনের সময় কেটে যাবে মিছিল আর নেশায় বাকি জীবন নেতাদের ঝুলি টেনে কুলি বেশে।তারা যে নিযেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেটিও অনুভব করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে দিনেদিনে।
কত রক্ত ঝড়লো,কত প্রান গেলো তবু এই জাতি একটি প্রকৃত মুক্তি দেখলো না,মুক্তির স্বাদ তাদের দাসত্বেই অনুভব করতে হয়েছে।কে এই জাতিকে মুক্ত করবে?যেই শৃঙ্খল পায়ে জড়িয়েছে সেই ১৭৫৭ সালে তা আসলে আজও কেউ ভাঙতে পারেনি।কারন জাতির মধ্যে যারাই অগ্রভাগে এসেছে এদের অধিকাংশই লোভী এবং প্রতারক,এরা বারবারই মুক্তিকামীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।।
—–দ্য রবিনহুড।
০২/০৯/২৫