সংস্কার,কর্পোরেটের আধুনিক দাস প্রথা আর শ্রমজীবীদের শোষণ রুখবে কে!
বালী তাইফুর রহমান তূর্য,সমাজকর্মী ও লেখক:
অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা সব সময় রেড লাইনেই টার্গেটেড থাকে।।সেটা হোক কর্মক্ষেত্রে বা সমাজে।যখন আপনার কথা রাজনৈতিক মতের বিপক্ষে যাবে তখন আপনি বিরোধী দলের ট্যাগ খাবেন,আক্রমনের স্বীকারও হবেন।আবার সারা দেশে কর্পোরেট দাস প্রথায় তো কথাই নেই।মালিকপক্ষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গেলেই চাকরি নট,কোনোমতে অযুহাত পাইলেই হলো।
ধরেন,আপনি একটা উঠতি বেসরকারি কোম্পানির চাকরি করেন।কোম্পানির স্টার্টআপ টাইমে নিজের সর্বোচ্চ এফোর্টটা সেখানে দেয়ার চেষ্টা করবেন নিজে থেকেই।নিজের দায়িত্বের বাইরেও শ্রম দেবেন প্রথম প্রথম।এমনকি যদি আপনি উৎপাদন নির্ভর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তাহলে কোম্পানির প্রতি প্রেমের চোটে লেবারের কাজও নিজে করে দেবেন।ধরেন শুক্রবার বা লেবার নেই কিন্তু ডেলিভারিও আছে আপনি অফিসার হলেও বস্তা মাথায় নিয়ে কিনা গাড়ি লোডই করা শুরু করলেন।কাজটা করেই দিলেন কিন্তু তাতে যে বিশাল পুরস্কার পাবেন আসলে তা কিন্তু না।
এরপরে ধরেন একদিন আরও বড় বিপদ দেখা দিলো,ধরেন আগুনই লেগে গেলো ওয়ারহাউজ বা বিশাল উচু টাওয়ারে যেখানে পানির পাইপ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও উঠতে সাহস করেনা সেখানেই পাইপ নিয়ে তরতর করে উঠে গেলেন তিন চারশো ফুট উপরে যেখানে দুর্ঘটনা বা বিস্ফোরণ ঘটলে আপনার নিশ্চিত মৃত্যু আপনিও জানেন,কিন্তু তবুও ঝুকি নিয়ে কাজটা করলেন।পানির পাইপ নিয়ে,দাহ্য মালামাল মাথায় করে টেনে প্রানপন চেষ্টা করে আগুন নিভালেন।বিনিময়ে কোম্পানি যে আপনাকে খুব বিশাল পুরস্কার দেবে আসলে তা কিন্তু না।
আবার স্টার্টআপ টাইম হিসেবে কোম্পানির দুর্দিনে মাসের পর মাস ওভারটাইম করলেন গড়ে ১৯/২০ -৩০/৩২ ঘন্টা পর্যন্ত কিন্তু কোম্পানি বেতনের সময় লাল কালিতে এক দাগে কেটে দিলো ওভারটাইমের টাকাও দেবে না।যাক মেনে নিলেন,নতুন কোম্পানি সেই চিন্তায়।
ভাবছেন কি প্রান দিয়ে দিলেই পুরস্কার পাবেন!অসম্ভব,শাস্তির বেলায় শতভাগ হলেও পুরস্কারে বেলায় এদেশের মালিকপক্ষের চোখে আপনি কোনোদিন কৃতদাসের চাইতে ভিন্ন কিছু কখনও হতে পারবেন না।কারন তাদের কাজই আপনাকে কৃতদাস হিসেবে গননা করে স্টিম রোলার চালানো।আপনার উপর সামরিক আইন চালানো হবে,কিন্তু তাই যদি হতো তাহলে তো আপনি সামরিক বাহিনীতেই যেতে পারতেন ওখানে কামলা দেবেন কেন।আবার সুযোগ সুবিধার বেলায় কিন্তু সেই নীতিতে থাকে না।
ধরেন আপনার দু চারদিন দুই মিনিট, পাচ মিনিট লেট হয়ে গেলো ঝড়বৃষ্টি,জ্যামজটে বা অন্য কোনো কারনে।এবার আপনাকে না জানিয়েই আপনার শাস্তি হলো পুরো দিনের বেতন কাটা,অথচ সেদিন কিন্তু আপনি কাজ করেছেন।মানে একটা দিন কাজও করেছেন আবার বেতনও পাননি,অর্থাৎ ডাবল শাস্তি তাও জানতে পারবেন মাইনে হাতে পাওয়ার পরে গুনতে গেলে।অথচ আপনার অপরাধ ছিলো দশ মিনিট বা সর্বোচ্চ এক ঘন্টার পারিশ্রমিক কাটার মতো,কিন্তু শাস্তি পেয়েছেন পুরো দিনের টাকাই পাননি।
আবার ধরেন,আপনার কাজ হলো মেশিনের সাথে,মেশিন চললে কাজ আছে মেশিন না চললে কাজ নাই।এখন কাজে গিয়ে দেখলেন কোনো কারনে মেশিন চলবে না প্রয়োজন নেই তখন আপনাকে ঘুরে,বসেই কাজের সময় পার করতে হবে এটা অপরাধ নয়,বা আপনার দুপুরের খাবারের সময় নির্ধারিত করা এক ঘন্টা সেটাও আট ঘন্টার বাইরে,কোম্পানি বললো সেটা ঠিক একটা থেকে দুইটাই হতে হবে কিন্তু আসলে একটার সময় তো অনেক হোটেলেও ভাত রান্না হয় না,বাড়িতে তো হয়না বললেই চলে।যদি তারা দোষ খোযে এটাও আপনার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।আপনি আপনার সময় থেকেই খাওয়ার জন্য খরচ করবেন কিন্তু সেটাও বাধা সময়েই হতে হবে।কোম্পানি চাইলে আপনাকে ঈদের ছুটিতেও এনে কাজ করাতে পারে,কিংবা না খাইয়ে রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত কাজ করিয়ে ছেড়ে দিলো,এখন আপনি অতো রাতে কোথায় যাবেন!,না গাড়ি পাবেন,না ঘরে ফিরতে পারবেন, না খেয়ে খালি পেটে মশার কামড় সহ্য করে সকাল হওয়ার অপেক্ষা ছাড়া আপনার আর কিছু করার নাই!এরপরে আরও মজা পাবেন যখন পরে শুনবেন ঈদ ফিদ যে ছুটিতেই কাজ করেন না কেন,সব গাবগাব গেছে অর্থাৎ পারিশ্রমিক পাবেন না,লাগলে ছুটি কাটাবেন অথচ আপনার পাওনা ছুটিই পচে যায় কাটাতে পারেন না।এসবের বিরুদ্ধে বাক্য উচ্চারণ করলেই আপনি অপরাধী,রেড লাইন টার্গেটেড এবং এনিহাউ আউট।
আবার,কথায় কথায় আপনার অপরাধ না হলেও মালিকপক্ষ আপনার মাইনে কাটতে রইলো,অত্যাচার যত প্রকার আছে তা করতে থাকলো।কিন্তু ভুলেও যদি আপনি এর বিরুদ্ধে শব্দ উচ্চারণ করেন তখন আপনার হাজার দোষ সামনে এনে আপনাকে পত্র ধরিয়ে বিদায় করা হবে,কারন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই রেড লাইন এবং টার্গেটেড।।কারণ করপোরেট দাস প্রথায় আপনি স্রেফ একজন কৃতদাস,এর বাইরে আপনার কিছু করনীয় নেই।
দিন শেষে আপনি যখন নিজের নিজের অতিরিক্ত এফোর্টের হিসেব করবেন তখন তারা সেগুলোকে আপনার নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে আখ্যা দেবে কিন্তু সেগুলোর বিপরীতে তাদেরও যে আপনার প্রতি কিছু নৈতিক দায়িত্ব ছিলো তা কিন্তু বলবে না।।আপনার লঘু অপরাধ বা যা অপরাধ না তাও অপরাধ হিসেবে প্রদর্শন করা হলেও যেসব অতিরিক্ত কাজে আপনার পুরস্কার প্রাপ্য ছিলো সেগুলিও পচা গেছে।
এদেশে রাস্ট্র শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা বা অধিকার আদায় করে দিতে আলাদা মন্ত্রনালয় বানিয়েছে,সেখানে সরকারি গাড়ি আছে,অফিসার আছে রাস্ট্র কোটি কোটি টাকা খরচও করছে কিন্তু শ্রমিকদের দু পয়সা কাজে আসে না।কিন্তু তারাও আসবে কাঠের চশমা পরে,যাবে পকেট ভাড়ি করে আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না,শ্রমিকের সাথে কথাই বলবে না,এরা মূলত মালিক পক্ষের জুলুমকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে শোষণ বৃদ্ধি ছাড়া কিছুই করে না।এই রাস্ট্রের এসব দপ্তর আর কত যুগ এমনই থাকবে,কে করবে এই পুরো সিস্টেমটা সংস্কার?
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ রিসালাত মীরবহর। অফিস: বরিশাল সদর, বরিশাল, বাংলাদেশ। www.obalardak.com, E-mail: obalardak@gmail.com, Contact: +8801516332727
Copyright © 2025 | অবেলার ডাক