প্রাকৃতিক সম্পদ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পরিশোধনকৃত পানি,নবায়নযোগ্য শক্তির গবেষণার বিকল্প নেই।
বালী তাইফুর রহমান তূর্য,সমাজকর্মী ও লেখক।।
ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে পরিশোধনকৃত ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহার বৃদ্ধি,সৌর বা বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ নির্ভরতা দ্রুত বৃদ্ধি না করলে মহা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসন্ন।চুরিতে ব্যস্ত সরকারেরা এসবে কান দেয়ার বা মাথা ঘামানোর সময় পায় না।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপে আর পানি উঠছে না।এতে যেকোনো সময় মাটির স্তরে ধস নামার ঝুঁকি বাড়বে।দেশে ব্যপকভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় করা হয়,যার বিকল্প হিসেবে সবখানে ভূ-উপরস্থ উৎস থেকে পানি পরিশোধন করে তা সরবরাহ করা এবং পুরো বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ব্যবহারকে আবশ্যক করতে হবে।গত বছর তিনেক আগেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা পত্র পাঠিয়েছিলাম,যদিও মন্ত্রনালয় আমাকে ডাকেনি তবে আমার পরিকল্পনাটি বাস্তবে পরিনত হতে দেখেছিলাম। জানি না আগেই কেউ এই পরিকল্পনা দিয়েছিলো কিনা,যেই দিক আসল কথা হলো কাজটা হওয়া।দেখলাম জনসাস্থ্য প্রকৌশল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো বিশাল বিশাল পানির ট্যাংক বিতরণ করে।কিন্তু দু:খজনক হচ্ছে অবহেলা,অনিয়ম আর চুরির ফলে এটিও শুরুতেই মুখ থুবড়ে পরার মুখে।
সবাইকে সচেতন না হলে এধরনের প্রকল্প সফল করা কঠিন।শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের গুরুত্ব তুলে ধরে এগুলো বাস্তবায়ন সরকারকেই করতে হবে।আরও দু:খজনক হলো অনেক পৌরসভা,সিটি করপোরেশন এলাকায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মান করা অধিকাংশ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালুই করা যায়নি,যাও চালু হয়েছিলো তাও বন্ধ হয়ে পরে আছে।যা উতপাদনে আসার আগেই অকেজো হয়ে পরে আছে স্রেফ দুর্নীতি,চুরি আর এসব থেকে লুটপাটের ধান্দার কারনে।মাতাল,অশিক্ষিত, চোরদের হাতে দায়িত্ব পরলে তারা চুরিটাই বোঝে বাকি দেশটাকে আর বোঝে না।
এরপরে আসা যাক নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌর বিদ্যুৎ এবং বায়ু বিদ্যুৎ ব্যবহার,উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়।দেশের প্রচুর নদী,রেল লাইন,শিল্প কল কারখানার ছাদ,বাসা বাড়ির ছাদ,রেলের ছাদ,সরকারি অফিসের ছাদ,গাড়ির ছাদ সব ফাকা পরে আছে।অথচ দেশে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ফটোভোল্টেইক সেল থেকে সৌর প্যানেল বানানো গেলে আর অল্প পয়সায় তা ছড়াতে পারলে সেটা দেশ জুড়ে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারতো।
অথচ শুধু মাত্র চোরদের সুবিধার জন্য সারা পৃথিবীতে ফেলে দেয়া যত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিলো তা এনে এনে জড়ো করে আবার সরকার তা ভাড়া নিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বসিয়ে বসিয়ে পয়সা দিচ্ছে।অথচ গবেষণা করলেই সৌর বিদ্যুৎ চালিত ইজিবাইক বা হাইব্রিড টেকনোলজির গাড়ি বানানো সম্ভব ছিলো।এমনকি অধিকতর গবেষণা করে ইনভারশন,ইন্ডাকশন টেকনোলজির আধুনিকায়নে শিল্প ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার চালু করা সম্ভব ছিলো।
শিল্প কারখানাগুলো কখনও নিজেরা নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে কারখানা চালানোর কথা স্বপ্নেও দেখে না,অথচ গবেষণার মাধ্যমে এগুলিও বাস্তবে পরিনত করা সম্ভব ছিলো।এখন প্রশ্ন হলো গবেষণাটা করবে কে,দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ালেখা আর গবেষণা বাদে রাজনীতি আর সংস্কৃতিতেই বেশি ব্যস্ত সবাই।বাকি যারাও সনদ নিয়ে বের হয় তারাও চাকরির পেছনে পাগলের মতো ছুটে বেড়ায়।
এদেশের ছেলেমেয়েরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের গবেষণাপত্র ফেলে রেখে চলে আসে,তারা মেধার সেই নির্জাসটা কাজে লাগায়।আর এদেশের গবেষণার পত্র কেজি দরে ভাঙারির দোকানে বিক্রি হয়।
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলো,আমরা পরে রইলাম শুধু চেতনা আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে। আসলে নেতারা শুধু এই তর্কে ব্যস্ত রেখে দেশটাকে চুরি করে ফকির বানিয়েছে এই পঞ্চাশ বছর ধরে।
দেশটাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বিপর্যয় থেকে বাচাতে হলে এখনই মেধাবীদের নিয়ে পরিশোধনীয় পানীয় জল আর নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীতে বিপ্লব ঘটাতেই হবে।আর সেজন্য অধিকতর গবেষণা এবং বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষিত সরকার ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ রিসালাত মীরবহর। অফিস: বরিশাল সদর, বরিশাল, বাংলাদেশ। www.obalardak.com, E-mail: obalardak@gmail.com, Contact: +8801516332727
Copyright © 2025 | অবেলার ডাক