আয়নায় অভ্যুত্থান ৬৯, ৯০, ২৪ মুক্তির তৃষ্ণায় কত রক্ত বইলো, সেই কাঙ্খিত মুক্তি কি মিলবে?

বালী তাইফুর রহমান তূর্য,সমাজকর্মী ও লেখক।। এই ভূমি ইতিহাসের পাতায় লেখা অনুযায়ী বারবার মুক্তিকামী জনতার রক্তে সিক্ত হয়েছে।রক্ত বয়েছে নদীর স্রোতের মতো,একটাই আশা একটাই আকাঙ্খা “মুক্তি আর স্বাধীনতা”।কিন্তু সেই আকাঙ্খা বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে এই মাটিতেই।শৃঙ্খল ছিড়ে পুরো মুক্তি কখোনও মেলেনি,রক্ত বারবার ব্যর্থ হয়েছে।শুধু মনিবের পরিবর্তন হয়েছে,গোলাম আর গোলামীর জিঞ্জিরের বস্তুত পরিবর্তন হয়নি।এখানে শুরু থেকেই সেই চোরের খনি কিংবা ঘুষের রিতী আর নেতাদের কম্বল চুরির মতো ঐতিহাসিক মুখো রোচক গল্প তো হরহামেশাই চায়ের দোকানের আলোচ্য বিষয়।একটি হতভাগা জাতি,যেখানে মাটির নিচে সম্পদ আছে,মস্তিস্কে মেধা আছে কিন্তু কিছুই এই মাটির কল্যানে আসে না। যে বনে শেয়াল,কুকুরের উপদ্রব অতিমাত্রায় থাকে অনেক প্রানীই অতিষ্ঠ হয়ে সেখানে আর থাকতে পারে না।

বাকরোধ,কন্ঠরোধ,চাদাবাজি ও চাদাবাজির কারনে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি,সর্বত্র সিন্ডিকেটের কারসাজি,পুলিশকে দলীয় লাঠিয়ালে পরিনত করা,চাকুরিতে শতভাগ ঘুষ আবশ্যকীয় রীতিতে পরিনত করা,মাইম্যান সেটাপে ভোট হরন,দলীয় সন্ত্রাসীদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করে নেতা বানানো,হাজার কোটি লুটপাট করে সারাদিন উন্নয়ন উন্নয়ন তজবি জপ,গ্রামীণ অবকাঠামোর ধ্বংস করে ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নের সিনেমা প্রদর্শন,৭১ আর স্বাধীনতাকে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিনত করা,চেতনা চেতনা জপে জপে তিক্ততার রসে চুপাচুপা,ভিন্নমত দমনের স্টিম রোলার চালানো।কথায় কথায় মতের মিল না হলেই জামাত শিবির রাজাকার তকমা।সব মিলিয়ে মানুষ হিসেবে মানুষের স্বাধীনতা হরনের বিরুদ্ধেই সেদিন দল মতের বাইরে গিয়ে মানুষ দাঁড়িয়েছিল বলেই পরিবর্তন হয়েছিলো গদিতে।

আবারও যদি সেই একই পরিনতি হয় তাহলে রক্তগঙ্গা বইয়ে লাভ কি হলো! বালু চাপা দিয়ে চাদা আদায়,পাথর মেরে হত্যা করে চাদার হিস্যা মিলানো,একের পর এক ধর্ষণ, পুরো জমিনের সীমানাটুকোতে কেবলই আতঙ্ক,এই বুঝি পিটিয়ে মারলো।এখন যে হত্যা করে সেও জানে না ঠিক কি কারনে হত্যা করছে,যে খুন হলো সেও জানে না কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো।যুবকরা আশাকরে ঘুষ ছাড়া মেধায় চাকুরী পাবে তাই রাস্তার তপ্ত কালো বিটুমিনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয় মুক্তির আশায়।কিন্তু আদতে সেই শক্ত শৃঙ্খল ভাঙে না, বরং ঘুষের রেট বারে বহুগুণ।

তবে সদ্য অভ্যুত্থান হওয়া একটা দেশ এক প্রকার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত অবস্থার মতো থাকে,কার্যত পুরো সিস্টেম বা কাঠামোটা ভেঙে পরে বিধায় একটা বছর পেরিয়ে গেলেও টালমাটাল অবস্থায় এখনো সব।কিন্তু মানুষ যে আকাশে চাদের অপেক্ষায় তাকিয়ে ছিলো সেখানে কেবলই কালো মেঘের ছাউনিতে অন্ধকার হয়ে এসেছে।কেউ জানে না, এই মেঘের বর্ষণ কতটা প্রবল হবে,ঝড়ো হাওয়া কিংবা বজ্রপাত অসহায়কে আশ্রয়হীন করে ডুবিয়ে মারবে কিনা।নাকি তীব্র বর্ষনের সৃষ্ট বন্যায় অভুক্ত থেকেই মরতে হবে কিনা।নাকি কোনো দমকা হাওয়া এই মেঘকে সড়িয়ে নিতে পারবে কেউ জানে না।কোনো অতিমাত্রায় ক্ষুধার্ত বাঘ পুরো এক পাল মেষের মধ্যে যতগুলোকে আহারে পরিনত করে তার কয়েক গুণ বেশিকে আহত করে ফেলে।

এই মাটির সাথে যাদের নিত্য ওঠাবসা,খেটে-খাওয়া দিন মজুর কিংবা ছোট্ট চাকুরী করা বা ছোট ব্যবসা করা মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর অন্তরে সামান্যই চাওয়া ছিলো,সাধ্যের মধ্যে দু মুঠো ডাল ভাত খেতে পাওয়া,একটু নিরাপদে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর মতো নিরাপত্তা,সন্তানটাকে প্রকৃত সুশিক্ষা দিয়ে মেধার ভিত্তিতে একটা কর্মসংস্থান করে দেয়া,মনটা খুলে একটু কথা বলতে,বুড়ো বয়সে সরকারি হাসপাতালে অল্প পয়সায় শরীরটাকে চিকিৎসা করিয়ে একটা সুস্থ মৃত্যু। ১৯৬৯, ১৯৯০, ২০২৪ যুগে যুগে যত গন অভ্যুত্থান হয়েছে,মানুষ এই মুক্তিটুকোই চেয়েছে।আর প্রতিটি গন অভ্যুত্থানে প্রান দিয়েছেন,রক্ত ঝড়িয়েছেন একাধিক এবং অসংখ্য মানুষ যার সিংহভাগই অরাজনৈতিক এবং একেবারে সাধারণ মানুষ।প্রশ্ন হলো যুদ্ধ করে স্বাধীন করা দেশে ফের মুক্তির তৃষ্ণায় এতো বার রক্ত দিতে হলো, তবু সেই মুক্তি কেন মেলে না, এবার কি মিলবে সেই মুক্তি?

যদি সেই আগের মতোই হয়,যা খুশি বলা যাবে না, যা খুশি লেখা যাবে না,যেখানে প্রয়োজন সেখানে যাওয়া যাবে না,রাস্ট্রের অফিসে অফিসে ক্ষমতাসীনরা নির্ধারণ করে দেবে অমুকে যাবে তমুকে যাবে না।পুরো সমাজটাকেই দলীয়করণ করে একঘরে করার মতো একটা কঠিন দিনের ছায়া আতঙ্ক যা বিরাজমান সেটি কোনো নাগরিকের আকাঙ্ক্ষাতেই ছিলো না।শুধু মনিব বদলের জন্য শৃঙ্খলবদ্ধ এই জাতির এতগুলো সাধারণ মানুষের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো না। সবাই মুক্তি চায়, মুক্তি চায় ত্রাসের রাজত্ব থেকে,মুক্তি চায় চাদাবাজি থেকে, মুক্তি চায় ঘুষের রাজত্ব থেকে, মুক্তি চায় এই ভয় আর আতঙ্ক থেকে।

  • Related Posts

    নলছিটিতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত।

    নলছিটিতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত। বালী তাইফুর রহমান তূর্য,নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির নলছিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল “সমন্বিত উদ্যোগ,…

    নলছিটিতে সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর গণসংযোগে জনতার ঢল

    নলছিটিতে সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর গণসংযোগে জনতার ঢল। বালী তাইফুর রহমান তূর্য, নলছিটি( ঝালকাঠি) সংবাদদাতা: ঝালকাঠি – ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো ঝালকাঠির…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *